
পানি শরীরবৃত্তীয় অধিকাংশ রাসায়নিক বিক্রিয়ার অত্যাবশ্যকীয় মাধ্যম, হোক না সেটা প্রতক্ষ্য কিংবা পরোক্ষ। মানব শরীরের গঠনগত উপাদানের ৫০-৭০% পানি। সরল হিসাবে যা দাঁড়ায় প্রায় চলিশ লিটারে। মানব শরীরের জন্য পানির প্রয়োজনীয়তা অসীম। মানুষ খাদ্য ছাড়া বাঁচতে পারে কয়েক সপ্তাহ, কিন্তু পানি ছাড়া কয়েকদিনের বেশি বাঁচতে পারেনা।
দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারের জন্য পানির দরকার হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ মতে একজন মানুষের দৈনিক চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজন ৭ দশমিক ৫ লিটার পানি। এছাড়া অন্যান্য দৈনন্দিন প্রয়োজনে প্রায় ২০ লিটারের মত পানি প্রয়োজন হতে পারে। এক হিসাবে দেখা গেছে প্রায় ৭৪ কোটি লাখ মানুষ বিশুদ্ধ পানি পান করার সুযোগ পান না।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে প্রতি এক কিলোক্যালরির শক্তির জন্য এক মিলিলিটার পানি পান করতে হয়। সারাদিন চব্বিশ ঘণ্টায় নির্ভেজাল পানি অথবা বিভিন্ন তরল যেমন ফলের রস, চা, কফি, কোমল পানীয় যোগান দেয় এক লিটার পানি। বিভিন্ন ধরনের খাবার থেকে আসে আরও এক লিটার। বিপাকের মাধ্যমে উপজাত হিসেবে আনুমানিক তিনশত পঞ্চাশ মিলিলিটার পানি আসে। সব মিলিয়ে এই হলো আড়াই হাজার কিলোক্যালরি খাদ্যের জন্য আড়াই লিটার পানির সহজ হিসাব।
উন্নয়নশীল দেশ গুলোতে পানির চাহিদা মেটাতে নারীদের উপর চাপ বাড়ছে। এক গবেষনায় দেখা গেছে দিনের ২৫ শতাংশ ব্যয় হয় পানি সংগ্রহের জন্য। বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাবে এবং সুষ্ঠুভাবে হাত না ধোঁয়ার কারনে প্রতিবছর পৃথিবীতে ৮ লাখ ৪২ হাজার লোকের মৃত্যু হচ্ছে, যা প্রতিদিন ২ হাজার ৩০০ জনের মত। এর অন্যতম কারন হচ্ছে দরিদ্রতা। উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশ সমুহে মৃত্যুর হার বেশি। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে।
অল্প খরচে যাতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা যায় সে জন্য কাজ করছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। বাংলাদেশ ও এর ব্যতিক্রম নয়। পানি বিশুদ্ধ করার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে।
– ফুটিয়ে পান করা
– পানি বিশুদ্ধকরন ট্যাবলেটের ব্যবহার
– পানি বিশুদ্ধকরন ফিল্টারের ব্যবহার
– আল্ট্রাভায়োলেট পিউরিফায়ার অথবা গ্রাভিটিফিড পিউরিফায়ার দিয়ে
– তাছাড়া ঘরোয়া ভাবে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্রযুক্তিও উদ্ভাবন করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
– বৃষ্টির পানি ধরে রেখে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করা প্রাকৃতিক বিকল্প হতে পারে।
সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার জন্য একজন পূর্নবয়ষ্ক ব্যক্তির প্রতিদিন প্রায় ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা প্রয়োজন । শরীরের জন্য পানির অনেক উপকারিতা রয়েছে।
ক্লান্তি দূর করতে : শরীরের কর্মক্ষমতার জন্য পানির প্রয়োজন। যদি আপনি ক্লান্তিবোধ করেন তবে তার প্রথম লক্ষন হচ্ছে ডিহাইড্রেশন। শরীরে পানির শুন্যতা সৃষ্টি হলে হয় শরীরের প্রতি রক্ত কনিকায় অক্সিজেন সরবরাহের জন্য আপনার হৃদপিন্ডকে কঠিন পরিশ্রম করতে । তাই পর্যাপ্ত পানি পান আপনার শরীরকে সতেজ রাখে এবং ক্লান্তিমুক্ত রাখে।
কিডনি সুস্থ রাখতে : ব্লাড ইউরিয়া নাইট্রোজেন, তরল বর্জ্য পদার্থ রক্ত থেকে ছেঁকে প্রসাবের মাধ্যমে বের করে। বলতে পারেন কিডনি হলো মহাদেবের নীলকন্ঠ। রক্তকে ঠিক রাখতে দিনের পর দিন যেন বিষ পান করছে কিডনি দুটো। তাই বেশি করে পানি পান করুন। খুব কম পানি পান করলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ক্যালোরি কন্ট্রোল : ডায়েট করার ভালো উপায়, খাবার কম খান, পানি বেশি পান করুন। শরীরে ওজন কমানোর ম্যাজিক্যাল উপায় বেশি করে পানি পান করা। এতে ক্যালোরি নষ্ট হয় বেশি।
হজমে সাহায্য করে :পর্যাপ্ত পানি পান আপনার বিপাক ক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। যার ফলে খাদ্য কণা সহজে ভেঙ্গে শরীরে পর্যাপ্ত শক্তি সরবরাহ করে। পরিপাকতন্ত্রের জন্য যা খুব সহায়ক।
ওজন নিয়ন্ত্রন :একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে বিজ্ঞানীরা দেখেন যে, খাবার খাবার গ্রহনের পূর্বে ২৮ আউন্স পানি খেলে তা আপনার ক্ষুদাকে নিয়ন্ত্রনে রাখে যার ফলে আপনি প্রয়োজনের বেশি খেতে পারবেন না। যেটা আপনার শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করবে।
শরীরের টক্সিন বের করতে : পানি একটি চমৎকার ডেটোক্সিফার যা আপনার শরীর থেকে টক্সিন ঘাম এবং ইউরিনের মাধ্যমে বের করে দেয়। পর্যাপ্ত পানি পান ইউরিনের মাধ্যমে সল্ট এবং ক্ষতিকর তরল বের করে দেয় যার ফলে কিডনিতে পাথর হতে পারেনা।
সুস্থ ত্বকের জন্য : পর্যাপ্ত পানি শরীরের হাইড্রেশন ব্যবস্থা ভালো রাখে এবং রক্ত চলাচলে সাহায্য করে, যা সুস্থ ত্বকের জন্য দরকার। যখন শরীর প্রয়োজনীয় পানি পায় তখন আপনার ত্বক মসৃন হয় এবং দেখতে সতেজ, নরম, উজ্জল হয়।
তাই বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা গেলে মানুষের জীবন মান যেমন উন্নত হবে তেমনি রোগব্যধিতে কম আক্রান্ত হবে। সুস্থ শরীরে কাজ করার উৎসাহ বাড়বে।